ধর্মকথা

0 355

(১)

নিজের অস্তিত্বের অন্বেষণ মোটেই সহজ কাজ নয় এবং আমি এই প্রক্রিয়ায় লম্বা একটি সময় অতিবাহিত করেছি। ভেবে তৃপ্ত হয়েছি যে, একই পথ পাড়ি দিয়েছেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীগণ; যাদের একপক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন এবং অপরপক্ষ ব্যর্থ হয়েছেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে তারা কেউই অন্যের ভাবনায় প্রভাবিত হননি।

(২)

আমাকে যখন কেউ চট করে প্রশ্ন করে, আমি ধর্মপালন করি কি না! আমি বিভ্রান্ত হই। কারণ এই প্রশ্নের উত্তর এতটা সহজ নয়, অন্তত আমার কাছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সৃষ্টির রহস্য আমাকে একবারের জন্যও ধরা দেয়নি, তবু আমি অপেক্ষায় আছি। তবে নিজ থেকে কখনো আর জোর করব না, সেই তাড়না নেই।

(৩)

মানুষের জন্মের পরপরই তার কাঁধে কিছু সিল মেরে দেয়া হয়, যেমন- নাম, বংশ, জাতীয়তা, ধর্ম ইত্যাদি। তাই আমরা একজন হয়ে যাই হিন্দু, একজন মুসলমান, কেউ হয় ব্রাহ্মণ, কেউ শিয়া বা সুন্নী; এরপর আসে ফার্স্ট নেম, সেকেন্ড নেম অথবা আর্য-অনার্যের প্রশ্ন, আরো নানাবিধ বিষয়!

আমি নিশ্চিত, বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ বা পরিণত বয়সে নিজ জ্ঞান বুদ্ধিতে এসব বিষয় আমাদের পছন্দ করার সুযোগ করে দিলে বর্তমান পৃথিবীর পুরো চিত্রটাই বদলে যেত। তখন বু্ঝা যেত কে কোন দেশ, জাতীয়তা বা ধর্ম বেছে নিচ্ছে! এবং এসবের যৌক্তিক কোন কোন কারণ আছে?

তাহলে কী ধর্ম বিশ্বাস ও স্রষ্টাকে বরণ করার উপায় এতটাই বৈষম্যমূলক যে, কে কার ঘরে বা কোথায় জন্মালো এই নিয়তির ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে?

(৪)

প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলোর যে বিষয়টি আমার কাছে সবচেয়ে বেদনার লাগে, তা হলো ভয় দেখানোর প্রবণতা। আমাদের জীবনটা এমনিতেই হাজারটা অনিশ্চয়তা ও কষ্টে জর্জরিত।

অসংখ্যা মানুষ নূন্যতম খাবার খেতে পারছে না। তাদের বাসস্থান কিংবা চিকিৎসা নেই। কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ বেঁধে যাওয়া যুদ্ধে অহেতুক মরছে নিরপরাধ মানুষ! হাজারটা সমস্যা চারদিকে। তাদের ক’জনের সৌভাগ্য আছে জ্ঞান অর্জন করে স্রষ্টাকে খুঁজে নেওয়ার?

কিন্তু কেন যেন সব ধর্মেই বলা হচ্ছে- নির্দিষ্ট ওই ধর্মের অনুসারী না হলে সে বিপথগামী ও তাকে নরকে পুড়িয়ে শাস্তি দেয়া হবে!

আমার ভাবতে অবাক লাগে, কোনো ধর্ম কেন এতটুকু উদার হতে পারল না যে- অন্তত সব ধর্মের অনুসারী ভালো মানুষের জন্য স্বর্গের দরজা খুলে দিতে?

(৫)

এসব ভেবেচিন্তে আমার অন্যদের মতো করে ধর্মপালনের ইচ্ছা এখন পর্যন্ত নেই। অনেক ভালো মানুষকে রেখে একা স্বর্গে গিয়ে স্বার্থপরের মতো থাকার ভাবনা আমার মাথায় কাজ করে না।

তবে হ্যাঁ প্রায়শই মনে হাহাকার জন্মায়। আত্মপরিচয় খুঁজে বেড়াই। মনে হয় এমন কেউ নিশ্চয়ই আছেন, যিনি ধর্মগুরুদের ব্যাখ্যার অতীত ও সুবিবেচক এবং ন্যায়বিচারক। যার ইচ্ছাতে বন্ধু, পরিবার ও প্রিয় মানুষদের সাথে আবার দেখা কবে! তাকে কেবলমাত্র আমি আমার মতো করেই খুঁজে পেতে চাইছি।

তাই নিত্যদিন অজস্র ভুল ত্রুটি ও জাগতিক চাহিদাকে মেনে নিয়েও আমি একটা জীবনরীতি মেনে চলি- সেটা হচ্ছে, ঠিকভাবে দায়িত্বপালন করা, বিনয়ী থাকা, দরকারে কারো পাশে থাকা, আত্মরক্ষার কারণ ছাড়া কাউকে আঘাত না করা ইত্যাদি।

আর হ্যাঁ কেউ যদি প্রচলিত ধর্মপালন করে ভালো থাকে, আমি কখনো তার বাধার কারণ হয়ে দাঁড়াব না। কারণ সত্যিকার অর্থে ধর্মপালন অনেকের জন্যই ভালো থাকার উপলক্ষ্য। এতে তারা শান্তি খুঁজে পান।

অস্বীকার করব না, অতীতে আমি ধর্মীয় রাজনীতি ও সহিংসতা নিয়ে লিখেছি বা বলছি। তবে কখনো তা কারো ব্যক্তিগত সুখ কেড়ে নেবার জন্য নয়। আমাকে যারা পছন্দ করেন তাদের অধিকাংশই ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি। ধর্মের সমালোচনায় আমার ভালো-মন্দ বিচারে ভুল হলে বা কাউকে আঘাত দিলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

(৬)

আজ কথাগুলো এভাবে বললাম কারণ কেউ কেউ ভাবছেন, আমি ধর্মীয় জীবন নিয়ে কখনো হয়তো ভাবিনি। উত্তরটা হলো- হ্যাঁ আমি ভেবেছি এবং নিজের ভাবনার জগতটা গুছিয়ে নিয়েছি।

তাই যদি কখনো আমার মনে হয়- আমি ভালো নেই, তাহলে আমি নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে যাব ও পথের খোঁজ করব।

সব ভালো মানুষের জয় হোক! শুভকামনা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.