মগের মুল্লুক : সামরিক জান্তার মিয়ানমার

0 819

নাফ নদী থেকে ভেসে উঠছে মৃতদেহ। গৃহহারা রোহিঙ্গারা প্রতিদিন পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নৃশংসতা দেখছে বিশ্ববাসী।

নোবেলজয়ী ও গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সুচির শাসনামলে, এমন হত্যাকান্ডে হতবাক সবাই। দেশে দেশে মিছিল হচ্ছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে সুচি’র ছবি। মিয়ানমারের ক্ষমতা কাঠামোতে সুচির সক্ষমতা কতটুকু! সে প্রশ্ন উঠছে সবার আগে।

কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাড স্পষ্ট করে বলেছেন, নৈতিক মূল্যবোধ আর বন্দুকের নল সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। দেশটির সামরিক জান্তাদের কাছে সুচির দায়বদ্ধতা আছে।প্রায় এক যুগ গৃহবন্দী থাকার পর সুচি ২০১০ সালে মুক্তি পান। এর দু বছর পর তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ৬০ ভাগ আসন পেয়ে জয় লাভ করে। পার্লামেন্টে ২২৪ টির মধ্যে ১৩৫ টি আসন পায় এনএলডি। গত পঁচিশ বছরের মাঝে এটিই ছিলো কোন উন্মুক্ত নির্বাচন।

মিয়ানমার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উত্তরোণের ফলে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর চালানো নির্যাতন অনেকটাই কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছিলো। যদিও অনেক বিশ্লেষক সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, সুচির জন্য এ জয়টা সামরিক বাহিনীর সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি ছাড়া অন্য কিছু নয়। দীর্ঘ পঞ্চাশ (৫০) বছর সামরিক শাসিত দেশটির হুট করে কোন পরিবর্তন আশা করাটা ভুল।

এর কারণ হলো, ২০০৮ সালের সংশোধিত সংবিধানে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীকে উল্লেখযোগ্য কিছু ক্ষমতা দেওয়া হয়। এগুলো হলো,

  • উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেকোন সময় রাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা। এমনকি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় হুমকি মনে হলে সরকারের ক্ষমতা কেড়ে নেয়া।
  • সামরিক বাহিনীর জন্য সংসদে পঁচিশ (২৫) ভাগ আসন বরাদ্ধ রাখা।
  • দেশের প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সীমান্তে নিজেদের সর্বময় ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা।
  • এবং
  • ভাইস প্রেসিডেন্টের, দুটি পদের একটি সেনাবাহিনীর জন্য বরাদ্ধ রাখা।

উপরে উল্লেখ করা বিষয় অর্থাৎ সংবিধানে কোন পরিবর্তন আনতে হলে অবশ্যই সংসদের ৭৫ ভাগ ভোটের প্রয়োজন হবে। যা এখনো নিতান্তই দূরহ একটি কাজ!

তবু ক্ষমতায় আসার পর সুচি উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন আনেন। ছেলেমেয়ের ভিন্ন জাতীয়তা থাকায় সুচি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হবার অযোগ্য ছিলেন। তাই তিনি পার্লামেন্টে একটি বিল পাশ করে স্টেট কাউন্সিলর পদ তৈরি করেন। তার এই পদটি সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সংসদ এবং সরকারের নির্বাহী ক্ষমতার যোগসূত্র স্থাপন করে

আপা:ত দৃষ্টিতে সেনাবহিনীর সাথে কোয়ালিশন করে ক্ষমতা চালাতে হচ্ছে সুচিকে। মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনীর কাজের প্রক্রিয়া লিখিত নয় বলে, এটা বাস্তবায়ন করা কঠিন। কারণ সেনাবাহিনী যদি সত্যিই কোন বিষয়ে সামরিক পদক্ষেপ নিতে চায় তাহলে  সুচি সরকারের করার কিছুই থাকে না। সুচি চাইলে প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে, সামরিক খাতে বাজেট কমানোর মতো শক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেন। তবে তা ক্ষমতায় ভারসাম্য আনবে না বরং সেনাবাহিনীর সাথে তার বিদ্বেষমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।

এছাড়া সুচির নীরব থাকার অন্যতম একটি কারণ হলো, বৌদ্ধ সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটারদের মন রক্ষা করা। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর সেদেশের সাধারণ মানুষের সহানুভূতি নেই। সুতরাং অং সান সুচি নিজের ক্ষমতার বৃহৎ স্বার্থের কথা ভেবে চুপ আছেন।

স্বভাবতই সুচির এই নীরবতা ভালো চোখে দেখছেন না বিশ্ব নেতৃবিন্দ। তাই বৈশ্বিক রাজনীতিতে তিনি এখন অসহায় ও নাজুক অবস্থায় রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তারা তাদের ক্ষমতার পরিধি আরো একবার আমাদের দেখাতে সক্ষম হলো।

এই সমস্যার আশু কোন সমাধান হবে না। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাপে, ভুক্তভোগী হবে বাংলাদেশ।

তথ্যসূত্র: সিএনএন, বিবিসি ও উইকিপিডিয়া

Leave A Reply

Your email address will not be published.