জটিল বিজ্ঞান , সহজ সূত্র

0 705

বেলুন কিভাবে আকাশে উড়ে?

বেলুনে যে গ্যাস থাকে তা প্রধানত হাইড্রোজেন বা হিলিয়াম গ্যাস। এ গ্যাস দুটি বাতাসের চেয়ে হালকা। তাই বেলুন এসব গ্যাস ভরা হলে, বেলুনটির ওজন, বেলুনটি দ্বারা অপসারিত বাতাসের ওজনের চেয়ে কম হওয়ায় বেলুনটি বাতাসে ভাসতে থাকে।

আকাশে তারা কেন ঝিকমিক করে?

আলো যখন এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে পরিভ্রমণ করে তখন প্রতিসরণের কারণে এর প্রকৃত অবস্থান থেকে দূরে সরে যায়। তারা বা নক্ষত্রগুলোর আলো আমাদের চোখে আসার আগে অনেকগুলো মাধ্যম পেরিয়ে আসে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বাধা পেরুবার তারার আলো বিভিন্ন ঘনত্বের মাধ্যমে পথ বদলিয়ে আমাদের চোখে আসে। তাই আমরা আলো ঝিকমিক ঝিকমিক করতে দেখি।

ধোঁয়া কেন বাঁকা হয়ে উড়ে?

ধোঁয়ায় যেসব উপাদান থাকে, কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড অথবা বিভিন্ন এসিড গ্যাস, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ও অন্যান্য অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা যেগুলো বাতাসের চাইতে হালকা। এর সাথে বাতাসের এডি কারেন্ট ইফেক্টের কারণে ধোঁয়া বাঁকা হয়ে আকাশে উড়ে।

শীতকালে কেন নি:শ্বাস দেখা যায়, গ্রীষ্মকালে যায় না?

শীতে জলীয়বাষ্প ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলীয় কণা আকারে নি:শ্বাসে ঘনীভূত অবস্থায় থাকে যা দৃশ্যমান হয়। কিন্তু গ্রীষ্মে তাপমাত্রার কারণে তা খুব তাড়াতাড়ি বাষ্পীভূত হয়ে যায় িএবং আমাদের চোখে তা দৃশ্যমান হয় না।

বরফ পানিতে ভাসলেও কেন অ্যালকোহলে ডুবে যায়?

আমরা জানি তরলে কোন বস্তু ভাসমান থাকবে নাকি ডুবে যাবে এটি নির্ভর করে বস্তুটির ঘনত্বের ওপর। তরলের চেয়ে ঘনত্ব কম বা সমপরিমাণ হলে বস্তুটি ভাসে, তরলের চেয়ে বস্তুটির ঘনত্ব বেশি হলে বস্তুটি ডুবে যায়। পানি ও অ্যালকোহল একইরুপ তরল ধর্মীয় হলেও পানি ও অ্যালকোহলের ঘনত্ব ভিন্ন ভিন্ন। বরফের ঘনত্ব পানির চেয়ে কম তাই বরফ পানিতে ভাসে। কিন্তু বরফের ঘনত্ব অ্যালকোহলের চেয়ে তাই বরফ অ্যালকোহলে ডুবে যায়।

একজন মোটা মানুষ একজন চিকন মানুষ, কার আগে সাঁতার শেখা সম্ভব

প্রশ্নটা বর্ণবাদী মনে হলেও উত্তরটা মোটেই বর্ণবাদী নয়। এর পেছনে রয়েছে গূঢ় সায়েন্স। উত্তরটা হবে অবশ্যই একজন মোটা মানুষ। কারণ মোটা মানুষটি অপেক্ষাপকৃত চিকন মানুষটির তুলনায় অধিক পরিমাণ পানি ও পানির চাপ অপসারণ করে ও তুলনামূলক সহজে ভাসতে সাহায্য করে।

মাটির পাত্রে কেন পানি বেশি ঠান্ডা থাকে?

মাটির পাত্রে খুবই ছিদ্র থাকে। সেখান থেকে পানি চুইঁয়ে চুইঁয়ে পড়ে ও বাহিরটা ভেজা থাকে। এ পানিতে সুপ্ত বাষ্পীভবন ঘটে। তাই এটি পাত্র থেকে তাপ শোষণ করে ও তরেলের তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে। তাই ক্রমান্বয়ে তাপ শোষণের ফলে বায়ুমন্ডলের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে পাত্রের পানি বেশি ঠান্ডা থাকে।

পিঁপড়েরা কিভাবে সারিবদ্ধ হয়ে হাঁটে

পিঁপড়েদের ভাবা হয় শৃঙ্খলার প্রতীক। যখন তারা হাঁটে ভাবা হয় তারা সুশৃঙ্খল হয়ে গমন করছে কিন্তু সত্য হলো ঘ্রাণ শুঁকে শুঁকে এগুচ্ছে।

পিঁপড়েরা সামাজিক সংঘবদ্ধ প্রাণী। লক্ষাধিক পিঁপড়েও একসাথে কাজ করতে পারে। পিঁপড়েদের সাফ্যল্যের জন্য ভালো যোগাযোগ দক্ষতাই প্রধানত দায়ী। এরা যোগাযোগ ও জটিল সব তথ্য আদান প্রদানের জন্য “ফেরোমন” নাম একধরনের রাসায়নিক ঘ্রাণ বা গন্ধের উপর নির্ভর করে।

খাদ্যের উৎস থেকে পিঁপড়েদের বাসস্থান বা গন্তব্য পযন্ত ফেরোমনের উপস্থিতি থাকে। প্রতিটি পিঁপড়ে প্রজাতির আলাদা আলাদা ফেরোমেন থাকে।  কোন একটি পিঁপড়ে প্রজাতি সর্বোচ বিশ ধরনের ফেরেমোন নি:সৃত করতে পারে। এবং প্রতিটি ফেরোমন আলাদা আলাদা তথ্য, সংকেত বা নির্দেশ বহন করে। পিঁপড়েরা এসব সংকেত বুঝতে ও ছড়িয়ে দিতে তাদের অ্যান্টেনা ব্যবহার করে এবং নিজেদের মধ্যে শৃঙ্গলা বজায় রাখে ও কাজ করে থাকে।

ঘোড়ার পায়ে আঙ্গুল নেই কেন?

৫৫ মিলিয়ন বছর আগের হায়রোকোথারিয়াম প্রজাতির ঘোড়ারও পায়ে অনেকগুলি আঙ্গুল ছিলো। কিন্তু সেই প্রজাতির ঘোড়াগুলো ছিলো অনেক ছোট। লম্বা প্রাণিদের ওজন ও উচ্চতার জন্য গতির সাথ সমন্বয় করতে পায়ে অনেক চাপ পড়ে। হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকগুলো ছোট ছোট আঙ্গুলের মতোই একটি খুড় শক্তিশালী এবং তুলনামূলক হালকা। প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব অনুযায়ী ধীরে ধীরে ঘোড়ার দু পাশের আঙ্গুলগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এবং মাঝখানের আঙ্গুলগুলো ধীরে ধীরে প্রশস্ত হয়ে খুঁড়ে রুপান্তরিত হয়েছে যেন দ্রুত গতিতে ঘোড়া দৌড়াতে পারে।

গ্যাসীয় গ্রহ জুপিটারের কেন্দ্রে কি আছে?

নাসার জুনো মিশন যেটি এখন জুপিটারকে কেন্দ্র করে পরিভ্রমণ করছে সম্ভবত সেখান থেকে এ উত্তরটি পাওয়া যাবে। জুপিটারের বায়ুমন্ডলে রয়েছে ৯০ শতাংশ হাইড্রোজেন ও ১০ শতাংশ হিলিয়াম। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন এর অভ্যন্তরে ধাতব হাইড্রোজেন থাকতে পারে। উচ্চচাপ ও পরিবেশের কারণে বিজ্ঞানীরা অদ্ভূত কিছু সেখানে থাকতে পারে বলে আশা করছেন।

গান শুনলে কেন ভালো লাগে?

সংগীতের মতো খুব কম জিনিসই রয়েছে যা আমাদের মধ্যে আবেগের আলোড়ন তুলতে পারে ও মস্তিষ্কে প্রশান্তি এনে দেয়। গবেষকরা সবসময় বিশেষ এই কারণটি ভেবে আশ্চর্য হয়েছেন। মানুষ আসলে হামিং বা অনর্থক শব্দ উচ্চারণ করতে করতেই কথা বলতে শিখে। সহজভাবে বলতে গেলে প্রথমে গান পরে ভাষা। তাই ইনহেরিটেট কারণ হিসেবে আমাদের ঐক্যতান বা গান ভালো লাগে।

সূর্য থেকে আমরা কিভাবে শক্তি পেয়ে থাকি

সূর্য থেকে শক্তি পাবার কারণ হচ্ছে সূর্যের অভ্যন্তরে ঘটা ফিউশন প্রক্রিয়া। আমাদের সৌরজগের প্রাণ সূয যে পরিমাণ শক্তি বিকিরণ করে তা বিলিয়ন বিলিয়ন নিউক্লিয়ার পাওয়ার স্টেশনের সমান। সূযের এই বিপুল পরিমাণ শক্তির উৎস এর অভ্যন্তরের হাইড্রোজেন ফুয়েল।

প্রেশার ‍কুকারে কেন তাড়াতাড়ি রান্না করা যায়?

চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে তরলের স্ফুটানাঙ্ক ও বৃদ্ধি পায়। তাই প্রেশার কুকারে তুলনামূলক কম সময়ে রান্না করা সম্ভব হয়।

নদীতে সাঁতার কাটা সহজ নাকি সাগরে

সমুদ্রের পানির ঘনত্ব বেশি হওয়ায়। সমুদ্রের পানিতে সহজে ভেসে থাকা যায়। তাই নদীর চেয়ে সাগরে সাঁতার কাটা সহজ।

কেন কুয়াশা হয়?

কুয়াশাকে বলা যেতে পারে ভূমির মেঘ। নিম্ন তাপমাত্রায় বাতাসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলীয় ঘনীভূত হয়ে কুয়াশার সৃষ্টি করে। সাধারণত ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শিশিরাঙ্ক বলে ধরা হয়ে থাকে।

বেশি উচ্চতায় কেন রান্না করা সহজ?

যতই উচ্চতায় যাওয়া যায় বায়ুমন্ডলের চাপ ততই কমে সেই সাথে তরলের স্ফুটানাঙ্ক ও ততই কমতে থাকে। তাই অনেক উচ্চতায়, যেমন পাহাড়ে পানি ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও কম তাপমাত্রায় ফুটতে শুরু করে। তাই অধিক উচ্চতায় রান্না করা তুলনামূলক সহজ কাজ।

শীতকালে কেন নি:শ্বাস দেখা যায়, গ্রীষ্মকালে যায় না?

শীতে জলীয়বাষ্প ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলীয় কণা আকারে নি:শ্বাসে ঘনীভূত অবস্থায় থাকে যা দৃশ্যমান হয়। কিন্তু গ্রীষ্মে তাপমাত্রার কারণে তা খুব তাড়াতাড়ি বাষ্পীভূত হয়ে যায় এবং আমাদের চোখে তা দৃশ্যমান হয় না।

কেন বায়ু প্রবাহ ঘটে?

রোমঞ্চকর হিমেল বাতাস অথবা প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়। সবই হয়ে থাকে বায়ু প্রবাহের তারতম্যের কারণে। অঞ্চল ভেদে ও নানা কারণে বায়ু প্রবাহে ভিন্নতা দেখা যায়।

উষ্ণ তাপমাত্রায় বাতাসের প্রসারণ ঘটে ও বায়ুর চাপ কমে। তাপমাত্র কম হলে বাতাসের সংকোচন ঘটে ও বায়ুর চাপ বাড়ে। কম বায়ুর চাপে বাতাস বাষ্পীভূত হয়। তখন শূণ্যস্থান পূরণ করতে আশেপাশে বাতাস প্রবাহিত হতে থাকে ও বায়ুর প্রবাহ ঘটে। অর্থাৎ বায়ু সবসময় উচ্চ থেকে নিম্ম চাপে প্রবাহিত হয়।

পৃথিবী ও এর পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র, বনাঞ্চল, মরুভূমি, মনুষ্য স্থাপনা, সবমিলিয়ে বায়ু প্রবাহ প্রবাহ ঠিক যেভাবে ঘটার কথা ঠিক সেভাবে ঘটে না। ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর কারণে বায়ু সবসময় উত্তর গোলার্ধ থেকে দক্ষিণ গোলার্ধে প্রবাহিত হয়ে চলছে। এটিকে বলা হয় কোয়ারিলিস ইফেক্ট।

এছাড়া সূযের আলো আমাদের ভূ-পৃষ্ঠে অসমানভাবে পড়ছে। তাই কোন একটি এলাকা ঠান্ডা ও কোন একটি এলাকা উষ্ণ থাকে। তাপমাত্রা সাম্যাবস্থার জন্যও বায়ু প্রবাহ ঘটে।

বিকিরিত সূয শক্তির দুই ভাগ বায়ু শক্তিতে রুপান্তরিত হয়। তাই আমরা বিভিন্ন দেশে উইন্ডমিল বা বায়ু কলের ব্যবহার দেখি।

সূত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস কিউ এন্ড এ

Leave A Reply

Your email address will not be published.