ব্ল্যাক ডেথ

0 688

ব্ল্যাক ডেথ হলো ইউরোপ ও ইউরেশিয়া অঞ্চলের প্লেগ মহামারি। ১৩৪৬ সাল থেকে ১৩৫৩ সাল পযন্ত এই রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। জার্সেনিয়া পাস্টেস (Yersina pestis) নামক ব্যাকটেরিয়াকে প্লেগের জন্য দায়ী করা হয়। ধারণা করা হয়, ইঁদুর থেকে ব্যাকটেরিয়াটির সংক্রমণ ঘটেছিলো।

প্রথম রোগীটির মৃত্যু হয় ১৩৩৯ সালে। তবে মোট কত মানুষ প্লেগে মারা যায় তার সঠিক হিসেব করা যায়নি। ইউরোপের আনুমানিক ৬০ ভাগ জনসংখ্যা সহ মোট ২০০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ব্ল্যাক ডেথে হয়েছিলো বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন।

প্লেগ রোগীর শরীরে প্রথমে কালো ফোস্কা বা টিউমারের মতো হতো। এরপর এগুলো বড় হয়ে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তো। অসহনীয় যন্ত্রণায় ভুগতে ভুগতে মাত্র তিন থেকে সাত দিনের মাথায় রোগী মারা যেত।

ভয়াবহ ছোঁয়াচে এই রোগ জাহাজের নাবিকদের মাধ্যমে দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে। ইংরেজ সৈনিকরা ফ্রান্স থেকে রোগের জীবাণু ইংল্যান্ডে নিয়ে আসে। ব্রিটেনে প্লেগ এতই মহামারি হয়ে ছড়িয়েছিলো যে কোন কোন এলাকায় সর্ব্বোচ ৭৫ ভাগ মানুষেরও মৃত্যু হয়েছিলো। শুধু সাধারণ মানুষ নন, বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও অনেক দেশের রাজ পরিবারের সদস্যরা প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

প্লেগের গ্রহণযোগ্য কোন চিকিৎসা পদ্ধতি না থাকায়, অদ্ভূত সব উপায়ে রোগ নিরাময়ের চেষ্টা করা হতো। যেমন, অনেক চিকিৎসক বিশ্বাস করতেন বাজে গন্ধ শুকলে প্লেগ ভালো হয়। তাই আক্রান্ত রোগীদের পশুর মল, মূত্র ইত্যাদির গন্ধ শোকান হতো। প্লেগ আক্রান্ত রোগীদের গোসলও  করতে দেয়া হতো না। কারণ বিশ্বাস করা হতো প্লেগ ঈশ্বরের দেয়া শাস্তি। তাই নগ্ন বা উদোম হয়ে তাকে অসম্মান করা উচিত নয়। এসব অপরিচ্ছন্নতার কারণে প্লেগ আরো বেশি ছড়িয়ে পড়েছিলো। ইউরোপে এ সময় পারফিউম ব্যবহারের রীতি বেড়ে যায়।

ব্ল্যাক ডেথ শিল্প-সাহিত্য, রাজনীতি, ধর্মীয় প্রেক্ষাপট ও জ্ঞান চর্চায় আমূল পরিবর্তন আনে। সেসময় সংগীত ছিলো মূলত: আনন্দ ও উচ্ছলতার। কিন্তু প্লেগ সময়কালে সংগীত বিষাদে ভরে যায়। চিত্রশিল্প, সাহিত্যে ও শিল্পের অন্যান্য শাখায় প্লেগের ছাপ পড়ে।

কুসংস্কারচ্ছন্ন হয়ে খ্রিস্টানরা প্লেগ সংক্রমণের জন্য ইহুদি ও মুসলিমদের দায়ী করতো। নিযাতনের পর কিছু কিছু ইহুদি বাধ্য হয়ে দায় স্বীকার করেও নিয়েছিলো। খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হতে না চাওয়ায় অনেক ইহুদিকে তখন হত্যা করা হয়।

প্লেগে মধ্যযুগে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ইউরোপের পুরনো সমাজ কাঠামো ভেঙ্গে নতুন রুপ দিয়েছিলো। শিক্ষায় বিজ্ঞান চর্চার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। ক্যাথলিক চার্চ অনেকটাই তার প্রভাব হারায় এবং প্রটেস্ট্যান্টনিজম শুরু হয়। ইউরোপে রেঁনেসার মতো ঘটনা ঘটে।

প্লেগ এখন আর মহামারি হয়ে না থাকলেও ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যনে ৩২৪৮ জন প্লেগরোগী পৃথিবীব্যাপী চিহ্নিত করা হয় যার মধ্যে মৃত্যু হয় ৫৪৮ জনের।

Leave A Reply

Your email address will not be published.