ছোট্ট মেয়ে সোনাবরু
আমি ও আমার স্ত্রী একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করি। আমাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ওরা দুজনই স্কুলে পড়াশোনা করে। বড় মেয়েটার বয়স পনের আর ছেলেটার নয়। পরিবারের আরেকজন সদস্য হলেন আমার শ্বাশুড়ি। এ একজন মানুষকে নিয়ে আমার আলাদা কিছু বলার আছে। আমার শ্বাশুড়ি ছোটবেলা থেকেই আমার বাচ্চাদের দেখাশুনা করছেন। উনি না থাকলে আমাদের উপায় কি হতো ভেবে পাওয়া যায় না। পরিবারের এ অল্প কজন মানুষ আমরা,সবমিলিয়ে বলা চলে সুখী সংসার।
প্রতিদিন সকালে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে একসাথে বাসা থেকে বের হই। নানান কাজে সারাদিনই ব্যস্ততায় কাটে আমাদের। অফিস শেষে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। বাসায় ফিরে গোছল শেষে কোন রকম ডিনারটা সারি। এরপর বিছনায় সটান হয়ে চোখ বুঁজি। এভাবেই চলে প্রতিদিনের। কোন কোন দিন বাসায় একবার ফোন করার ও সময় মেলে না যে বাচ্চাদের খোঁজ নিবো। ওরা কেমন আছে? কি করে? কেমন করে সময় কাটায়? এসব ভাবনায় সারাদিনই টেনশনে কাটে। তবু আমার শ্বাশুড়ি আছেন ভেবে মোটামুটি নিশ্চিন্ত থাকি। উনি বাচ্চাদের মজার মজার গল্প শুনিয়ে সময় কাটান। এটা তার একধরনের ক্ষমতা। আমার ছেলেমেয়েরা ও নানুর মুখে গল্প শুনতে অস্থির হয়ে থাকে। নানা গাল গল্পে উনার ভান্ডার ভরা,এভাবেই গল্প শনতে শুনতে আমার ছেলেমেয়েদের অবসর কাটে।
কোন কোন দিন যদি ছোট ছেলেটাকে ফোন দিয়ে জিঙ্গেস করি,আব্বু কি করো? ছেলে উত্তরে প্রায়ই বলে,আমি,আপু নানুর কাছে গল্প শুনি। কখনো কখনো আমারা বাসায় ফিরলে ছেলে আবার তার নানুর কাছে শোনা গল্প কখনো কখনো আমাদের শোনায়। আমি তার মা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ছেলের মুখের কথা শুনি। সবই রাক্ষস,ভোক্ষস,ভ’ত,পেত এসব বাচ্চাদের গল্প। আমি আর ওর মা ছেলের মুখে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি। একদিনের কথা।আকাশে পূর্ণ জ্যোস্না। আমরা পরিবারের সবাই ছাদে বসে আছি। বাচ্চারা তার নানুকে ধরলো গল্প বলতে। আমরা দুজন ও তাল দিলাম।
মা আমাকে আর শিলাকে বললেন, কি যে বলো? বাচ্চাদের গল্প তোমরা শুনবা? শিলা বললো,মা তোমার যা মন চায় বলো। তোমার সব কথাই শুনতে ভালো লাগে।
-আচ্ছা বেশ, আমার নিজের জীবনের একটা ঘটনা তোমাদের শুনাচ্ছি। এটা কোন গল্প না। আমার জীবনের কথা। শিলা, তোকে তো অনেকবারই বলেছি।
-মা কোনটা?
-ওই যে সোনাবরু।
-হুম বলো।
‘মেয়েটার নাম ছিলো সোনাবরু। সোনাবরু আর আমি একই ক্লাসে পড়তাম। সোনাবরুরা ছিলো দুই ভাই, এক বোন। বড় ভাই ইউনুস কাজের খোঁজে ঢাকা যায়। আর খোঁজ মেলেনি। সে মারা গেছে না বেঁচে আছে কেউ জানে না। ফেরদৌস আর সোনাবরু ছিলো পিঠেপিঠি। সারাদিন বাঝাবাঝি করতো,ঝগড়াঝাটি করতো ওরা। আবার কেউ কাউকে ছাড়া থাকতেও পারতো না। ওদের একটা ছাগল ছিলো। সোনাবরু সারাদিন ওই ছাগলের পিছনে পিছনে ঘুরতো। ছাগলের নাম সে দিয়েছিলো রতন। আমরা ওকে ক্ষেপাতাম। মজা করে বলতাম রতন তোর জামাই লাগে। ফেরদৌসও আমাদের সাথে মিলে সুযোগ পেলেই বোনকে ক্ষেপাতো। সোনাবরুকে হঠাত হঠাত বলতো, সোনাবরু, তোর রতন কই জানস? রতনরে খুঁইজা পাইতেছি না। মনে হয় চুরি হইয়া গেছে। আবার কখনো বলতো আব্বা তোর জামাইরে হাটে বেঁইচা দিবো বলছে। কসাইরা জব দিবো। এইসব বলতো। এসব বলে বলে বোনকে সে রাগাতো,ভয় দেখাতো। কথা শুনে সোনাবরুর সে কি কান্নাকাটি আমরা দেখতাম। যতবার বলতো ততবারই সে ভ্যাঁ ভ্যাঁ কওে হাত পা ছাড়িয়ে মাটিতে শুয়ে পড়তো। গড়িয়ে গড়িয়ে কাঁদতো। তখন ওর ভাই আামাদের নিয়ে হাসতো।’
‘সোনাবরু জেদি ছিলো। ওর ভালো নাম হলো ফেরদৌসী আখতার। ভাইয়ের সাথে নামে ও মিল। এসব নিয়ে দুজন ঝগড়া করলে বোনের জেদের কাছে হার মানতো ফেরদৌস। তাই সোনাবরু রাগ করলে সে বোনের সাথে কথা না বলে থাকতে পারতো না। সোনাবরুর সামনে গিয়ে কানে ধরে মাফ চাইতো। জানপ্রাণ ভালোবাসতো সে বোনকে। ভাইকে সোনাবরু ডাকতো দাদা বলে। ফেরদৌস ওর দু ক্লাস আগে পড়তো।’
‘অনেক আগের কথা তো। এতদিনে অনেক কিছুই হয়তো ভুলে যেতাম। কিন্তু সোনাবরুকে এমন একটা মেয়ে যাকে একদিনের জন্য ও ভুলা সম্ভব না। আমি ওকে ভুলিনি। ক্লাসে আমরা দুজন এক সাথেই বসতাম সবসময়। ও আমাকে বলতো,শিল্পী। সই। তুই আমি যত বড় হই একসাথে থাকবো। তুই আমাওে ছেড়ে যাইস না। আমাদের দুজনের জামাইও হবে একটা। এসব অদ্ভুত অদ্ভুত কথা শুনে আমি ওর আরো আপন হয়ে গেলাম। ও সহজেই সবার সাথে মিশে যেতে পারতো। সবাইকে হাসাতে পারতো নিজে হাসতো। ক্লাস ওয়ান থেকে ওর রোল এক ছিলো। নানান রকম পাগলামি করতো মেয়েটা। দুপুরভর পুকুর পাড়ে সাঁতরাতো। সন্ধ্যে হলেও উঠতো না। মাছ না পেলেও শুধু শুধু বড়শি গেঁথে বিলপাড় বসে থাকতো। বিকেল হলে আমাদের সবাইকে ডেকে নিয়ে আসতো খেলতে। সুপাড়ি গাছে উঠে সুপাড়ি চুরি করতো। চুরি করা সুপাড়ি বেঁচে আমারা আইসক্রিম খেতাম। আরো নানা রকম পাগলামি করতো সে। ও ছিলো খুবই প্রাণখোলা একটা মেয়ে।’
‘স্মৃতিগুলো তোমাদের কাছে অনেক মজার মনে হচ্ছে তাই না? কিন্তু জানো জীবনে সুখ দু:খ এত নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকে। কখন কোনটা বড় করে দেখা দেয় বলা যায় না। বরগুনার কেওড়াবুনিয়ায় আমাদের সে ছোট গ্রামটিতে বাস করা সব লোকই ছিলো অতিদরিদ্র। খারাপ অবস্থা তো আমাদের সবারই ছিলো কিন্তু সোনাবরুর বাবা কাশেম দফাদার হঠাত একটা অসুখে পড়লো। সবাই যেমন করতো। কবিরাজী অষুধ খাওয়ানো হলো। উপকার হলো না। দু একবার ধার দেনা করে শহরে ডাক্তার দেখানো হলো। কিন্তু শহরের ডাক্তার দেখানো ভীষণ খরচাপাতির কাজ। গরিব সোনাবরুরা কি আর করবে। লোকটা বিছানায় পড়ে রইলো কদিন। এদিকে ঘরে রোজগার করার মতোও লোক নেই। অভাব তখন তাদের বেঁচে থাকাটাই কষ্টের হয়ে গেছে। সোনাবরুর মা পাড়া প্রতিবেশী কাছে ধার কর্য করে সংসার চালাতে লাগলো। বাবার বাড়িতে থেকে ভাইদের ফুটর্ফমাশ করলে যদি কিছ দিতো। এভাকে একটা বছর কাটলো। এক বছর বিছানায় পড়ে ছিলো সোনাবরুর বাবা। তখন থেকে সোনাবরুর মুখে হাসি হারিয়ে গেল। কখনো কখনো স্কুল ছুটি হলে আমরা দেখতে যেতাম সোনাবরুর বাবাকে। এখনো আমার চোখে ভাসে। পাটিতে একটা কঙ্কাল সার একটা লোক শুয়ে আছে,আর আমরা দেখতে গেলে বলতো, ‘কিরে মরা মানুষ দেখবার আসছস? যা যা যা সামনের তে যা। সোনাবরুর বাবা খুব বেশি দিন আর কষ্ট করলেন না। হঠাত মারা গেলন। সোনাবরুর মায়ের অবস্থা তখন পাগলের মতন। বাচ্চা বাচ্চা এই দুইটা ছেলে মেয়ে নিয়ে তিনি কি করবেন? কাজ করে খাবার বয়স তো এদের হয়নি।ও। এর মধ্যে সোনাবরুর ছাগলটা বিক্রি করে দিতে হলো। সোনাবরুর সেদিন সে কি কান্না! সে ছাগলের স্মৃতি হিসেবে। ছাগল বাঁধার দড়ি রেখে দিলো। ও এর গন্ধ শুকঁতো। দিনে দিনে অভিভাবক শূণ্য ওদের অবস্থা আরো খারাপ হলো। দিনে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে প্রায়ই। না খেয়ে থাকার যে কি কষ্ট তা তোমরা কোনদিন বুঝবে না। আমার বাবা বেঁচে ছিলেন। দিনমজুরের কাজ করতেন। তবুও আমাদের সংসারেও অভাব ছিলো। সংসারে অভাবের দিনগুলোতে এমনও গেছে এক এক একজন একবেলা একবেলা করে খেতাম। আব্বা শুধু দুপুরে খেত। মা রাতে খেত। এসব কথা তোমাদের কাছে রুপকথার গল্পের মতো লাগবে। কিন্তু আমারা জানি কখনো কখনো জীবন কত কঠিন। কত নিষ্ঠুর। কখনো কখনো তা কল্পনাও করা যায় না।’
‘বাপের বাড়ি পাড়াপ্রতিবেশী এভাবে কে কাকে কয়দিন দেখে বল! বাধ্য হয়ে সোনাবরুর মা আকলিমা ইউনিয়ন পরিষদের খুচরা কাজগুলো মাটি কাটা,খাল কাটা, রিওপা সড়ক প্রকল্পের কাজ এসব করে সংসার চালাতেন। তখন সংসারটা কোনরকম হলেও চলতো। কিন্তু এসব কাজ তো বছরের সারা মাস পাওয়া যায় না। তাই যখন সরকারি কাজ বন্ধ হয়। তখন আর তাদের দেখার কেউ থাকে না। দিনে এক বেলা খায়। সোনাবরুর মা কেঁদে কেঁদে চোখের জল ফেলে। কঁকিয়ে উঠে কেঁদে বলে,গলায় দড়ি দিয়া মরতারতাম যদি। সোনবরু মায়ের কান্না দেখে। আমার ছোট্ট সেই বান্ধবীটি ক্ষুধার জ্বালায় রাতে ঘুমাতে পারতো না। রাত জেগে জেগে কাঁদতো আর মাকে বলতো,মাগো,আমরা এত গরিব ক্যান? সবের বাবা আছে। আমাদের বাবা নাই কেন?’
‘সোনাবরুর আত্মসম্মান ছিলো অনেক। তার মাকে লোকেরা বাজে বাজে ইঙ্গিত দিয়ে কথা বলতো। মানুষের কথা শোনা। মানুষের কাছে বারবার যাওয়া। মায়ের অপমান সোনাবরু সহ্য করতে পারতো না। শিল্পী শোন,এসব আমার আর একদম ভালো লাগে না। দূরে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে হয়। ও ও বয়সে যা বুঝতো আমি তা বুঝতাম না। শুধু ওর কথা শুনতাম। ’
এভাবে একটা বছর কেটে গেল। আমরা ক্লাস ফোরে উঠলাম। শত কষ্টের মধ্যে সোনাবরু পড়ালেখা চলিয়ে গেল ঠিকই। কি›তু সংসারে কোন কূল কিনারা না দেখে কিশোর ফেরদৌস পড়ালেখা ছেড়ে দিলো। তার ভাই ফেরদৈাস কাজের খোঁজে আসলো শহরে। কচুক্ষেতের একটা স্টুডিওতে পাঁচশ টাকা বেতনের কাজ নিলো। এক ঈদে সোনাবরু ভাইয়ের কাছে একটা স্কুল ব্যাগ চাইলো। ফেরদৈাস বোনের ২০০ টাকা খরচ করে আবদার রেেেখছিলো। জীবনে প্রথম স্কুল ব্যাগ পেয়ে সোনাবরু সে কি খুশি! ব্যাগ হাতে ভাইকে বলেছিলো,দেখিস দাদা,যদি বেঁচে থাকি কোনদিনই পরীক্ষায় দ্বিতীয় হবো না।”
ফেরদৌস ঢাকায় চলে যায়। এভাবে আরো দু তিনমাস কাটে। সংসারে অভাব কমে না। আশেপাশে কাজ না পেলে সোনাবরু আর তার মা না খেয়ে থাকে কোন কোন দিন। চতুর্থ শ্রেণীর দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার ফল দিবার কথা ছিলো সেদিন। সেদিন ছিলো সোনাবরুর জন্মদিন ও। ওইদিন সকালে হঠাত অনেকদিন পর সোনাবরুকে আগের মতন খুশি দেখলাম। আসলে আমি তো আর জানি না ওর মনে কি আছে। আমার বাসায় আসলো আমাকে নিয়ে স্কুলে খেল। দোকানদারকে বলে কয়ে দশটাকার একটা কেক জোগাড় করলো। সেই ছোট্ট কেকটা একটু একটু ভেঙ্গে ও আমাদের দিলো। হেডস্যারকে মুখে তুলে খাওয়ালো। আমরা বান্ধবীরা সবাই মিলা বার্থডে উইশ করলাম। সোনাবরু আমাকে বললো,শিল্পী তোর জন্মদিনে আমরা আরো বড় কেক কিনবো। আমরা কম কম খাবো স্যার দেও বেশি বেশি দিব। দুপুরের দিকে রেজাল্ট হল। সোনাবরু এবারও ফার্স্ট। ও রেজাল্ট শুনে ঝরঝর করে কেঁদে দিলো। দুপুরের পরের ক্লাস সে করলো না। সে বললো শিল্পী,আমার বার্থ ডে মা আজ মুরগির মাংস রেঁধেছেন। আমি যাই সকালে খাইয়া আসি নাই। খুব ভুক লাগছে। তুই বিকালে আসিস। ”
“জন্মদিনের দিনের দিন ও ঘরে ভাত ছিলো না। তাই সকালে খেতে পারেনি সোনাবরু। সকালে হাড়ি খালি দেখে স্কুলে আসে সে। মা কথা দিয়েছিলো মুরগির মাংস রান্না করবেন। দুপুরের বাসায় গিয়ে ও মাকে ঘরে পায় না সে। তখনও হাড়ি খালি। ক্ষিদার অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে ছোট্ট সোনাবরু। তখন ও তার মা আকলিমা দু গ্রাম পড়ে তার ভাই ভাবি দের গৃহস্থলি কাজ করছিলেন। তার মন অস্থির। সকালে মেয়ে খেয়ে যেতে পারেনি রাগারাগি করেছিলো। কত তাড়তাড়ি কাজ শেষ করতে পারেন তিনি। চাল নিয়ে তবু এতদূও পায়ে হেঁটে হেঁটে আসতে সন্ধ্যে হয়ে গেল। আকাশে হালকা কালো আঁধারের রেখা পড়েছে। বাসায় পা ফেলতেই তার মনটা কোন এক অজানা আশঙ্খায় ছোট হয়ে যায়। প্রতিদিন সোনাবরু মায়ের অপেক্ষায় দরজায় বসে থাকতো আজ নেই। সোনাবরু সোনাবরু বলে কয়েকবার ডাকে আকলিমা। কোন সাড়াশব্দ নেই। ঘওে ঢুকতেই তার সমস্ত শরীরটা হিম হয়ে যায়। ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায় সমস্ত পৃথিবী। ঘরের চৌকাঠে সোনাবরুর ছোট দেহটা তখন ঝুলছে। দৌড়ে গিয়ে মেয়ের ঝুলন্ত দেহটা আলগা করে নামান। মাথার ঝাকড়ানো চুল ধরে নাড়েন। চিতকার করে ডাকেন মেয়েকে। সোনাবরু কথা বলে না। অনেক মান অভিমান নিয়ে ছোট সোনাবরু খেতে না পেয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়।”
“এই হল গল্প। জীবনের গল্প। হারিয়া যাওয়া জীবনের কথা। কথা দু:খ ছিলো ঐ ছোট্ট মনটায়। ভাত খেতে না পেয়ে সোনাবুর আত্মহত্য করে। সোনাবরু মানে কি জানো? সোনার মতন বরণ। সেই সোনার মতন বরণ মেয়েটি মরে গেছে। আমি তাকে ভুলতে পারি না। মাকে স্কুলে যাবার আগে খেতে না পেয়ে বলে গিয়েছিলো,দেখিস মা,দুপুরেও না খেতে পারলে আমি মরবো। মা বলেছিলেন তোকে আজ মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খাওয়াবো। মা কথা রাখেননি। অভিমানি সোনাবরু তার কথা রেখেছিলো। তার প্রিয় ছাগলটার রশি গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছি। সোনাবরু কবওে আমরা আমরা একটা রক্তজবা গাছ লাগাই। আমাদেও জাকিতরতবক প্রাইমারি স্কুলে আমরা বান্ধবীরা ওর ছবি বাঁধাই করে রেখেছি। ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পেয়ে আমরা বান্ধবীবরা ওর কবরটা বাঁধাই করি। সোনাবরু মরে গেছে এ কথাটা আমি এখনও মানতে পারি না।”
আমার শাশ্বড়ি হু হু করে কাঁদছেন। আমি শুধু ভাবছি এ কী শুনলাম!