হায় চিল, শহরের চিল!
সহজাত গাম্ভীর্য আর রাজসিক চেহারা। ঢাকার বনানীতে বাসা বেঁধেছে এই শঙ্খচিলটি। নাগরিক কোলাহল ও ধূলি-ধূসরতার শহরে, এক নজড় পাখিটিকে দেখলে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে। ফটোগ্রাফাররা হয়তো বিমুখ হবেন। তবু সঠিক লোকেশন জানাচ্ছি না।
চিল এর ইংরেজি নাম kite bird, এটি অ্যাক্সিপিট্রিডি (Accipitridae) গোত্রের শিকারি পাখি। বাংলাপিডিয়ার মতে, পৃথিবীতে মোট ২০ প্রজাতির চিল আছে।
আমাদের দেশে পরিচিত ৩ টি প্রজাতি হলো, কালোকাঁধ চিল, ভুবন চিল ও শঙ্খচিল।
কালোকাঁধ চিল, পাতলা বন-বাঁশ ঝাড় ও গ্রামাঞ্চলে দেখা যায়। ভুবন চিল, দল বেঁধে আকাশে উড়ে বেড়ায়। বর্জ্যভূক পাখি হিসেবে এর পরিচিতি আছে। শঙ্খচিল, বিভিন্ন জলাধার ও ধানখেতের আশেপাশে মাছ শিকার করতে পছন্দ করে।
দীর্ঘ ডানা, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি ও দুর্বল পা এদের শারীরিক বিশেষত্ব। শিকার বাগে আনতে চিল শক্তিশালী নখর ও ঠোঁট ব্যবহার করে। বাস্তুতন্ত্রের সর্বোচ্চ এই খাদক পাখি ছোট ছোট প্রাণী, মাছ ও পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। ওজনে স্ত্রী পাখি পুরুষ পাখির চেয়ে কিছুটা ( ৩০-৫০ গ্রাম) বড় হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পযন্ত শঙ্খচিলের প্রজনন ঝতু। এ সময় সঙ্গী পাখি সহ এটিকে নিজেদের আকাশে উড়তে ও খাবার শিকার করতে দেখা যায়। চিল দম্পতি কখনো কখনো নিজেরাই নিজেদের বাসস্থল তৈরি করে, কখনো বা আগের মৌসুমের বাসাটা ঠিক করে নেয় অথবা অন্য কারো (কাক, বাজপাখি) বাসা জবর দখল করে।
পাখিদের মিলনের পর নারী সঙ্গীটি সাধারণত দুটি ডিম পাড়ে। বাচ্চা ফুটতে একমাস সময় প্রয়োজন হয়। ছয় সাত সপ্তাহ পর নতুন ছানা’রা উড়তে শিখে। চিলরা স্বাভাবিকভাবে ২৫ বছর বাঁচে।
এইতো গেল, পাখিটির জীবনকাল। বাংলা সাহিত্যেও চিল বিশেষ স্থান দখল করে আছে। শামসুর রাহমানের পন্ডশ্রম কবিতায় ছোঁ মেরে কান নিয়ে যাবার অভিযোগ উঠেছিলো চিলের বিরুদ্ধে। কবি ঢিল মেরে চিলটাকেও নিচে ফেলতে চেয়েছিলেন। যদিও পরে বেচারা চিল অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছে।
এই যা, কি সব ভাবছি! কবি জীবনানন্দ দাসও তো শঙ্খচিল হয়ে ফিরতে চেয়েছিলেন, ধানসিঁড়ি নদীর তীরে এই বাংলায়। কখনো কি তার শহরে আসার ইচ্ছে মনে জেগেছিলো?
ছবি: মিথুন রেজা