আনা ফ্রাঙ্কের অজানা কিছু তথ্য

0 849

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে ১৯২৯ সালের ১২ জুন জন্মগ্রহণ করেন আনা ফ্রাঙ্ক। তার বাবা অটো ফ্রাঙ্ক ছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি জার্মান সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন। স্ত্রী এডিথ, বড় মেয়ে মার্গারেট ও ছোট মেয়ে আনা’কে নিয়েই ছিলো অটো ফ্রাঙ্কের সংসার। এডলফ হিটলারের মর্মান্তিক ইহুদি নিধনের শিকার হয় পরিবারটি। হলোকাস্টে তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যা করা হয়।

কিশোরী আনা’র বিশ্বব্যাপী পরিচিতির কারণ তার ডায়রি বা দিনলিপি। গৃহে অন্তরীণ একজন কিশোরীর একান্ত অনুভূতির কথা লিখা ছিলো সে ডায়রিতে। পরবর্তীতে “The Secret Annex: Diary Letters from June 14, 1942 to August 1, 1944” ডায়রিটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম দলিল হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়।

এ ঘরেই আত্মগোপন করে ছিলো পরিবার দুটি

জার্মানিতে নাৎসিদের উত্থান ঘটলে ইহুদি ফ্রাঙ্ক পরিবার প্রতিকূলতা এড়াতে আমস্টারডামে চলে আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তারা ও অন্য একটি পরিবারসহ মোট সাত জন একটি অ্যাপার্টমেন্টে আত্মগোপন করে। এ সময় আনার প্রিয় কাজ ছিলো ডায়রি লেখা। ১৩ তম জন্মদিন আনা এটি উপহার হিসেবে পায়। আনা তার ডায়রিটির নাম দিয়েছিলো ‘কিটি’। তার বেশিরভাগ কথোপকথন ছিলো কিটির সাথে। আনা লিখতে পছন্দ করতো। ১৯৪৪ সালের ৫ এপ্রিল সে যেমনটি লিখেছিলো,

“When I write, I can shake off all my cares.”

১৯৪২ সালের জুলাই থেকে আনা’রা প্রায় দুই বছর আত্মগোপন ছিলো। যেখানে রাতের বেলায় বাতি জ্বালানো যেত না। দিনে জানালা খোলার উপায় ছিলো না। ঘুপচি ঘরের বিমর্ষ দিনগুলো আনা তুলে এনেছেন কলমের খোঁচায়। সেই কঠিন দিন ফ্রাঙ্ক পরিবার বরণ করে নিয়েছিলেন হাসি কান্নায়, বেঁচে আছেন এই ভরসায়। শেষ পর্যন্ত তাও হলো না। গোপন আস্তানায় আশ্রয় নেবার পঁচিশ মাস পর ১৯৪৪ সালের ৪ আগস্ট সেখানে হানা দেয় নাৎসি বাহিনী।

ধারণা করা হয় পরিবারটি দুটি বিশ্বাস ঘাতকতার শিকার হয়। ৪ আগস্ট ১৯৪৪ সালে, একজন জার্মান সিক্রেট পুলিশ অফিসার ও ৪ জন পোলিশ নাৎসি অনুচর গোপনে সেই অ্যাপার্টমেন্টে হানা দেয় ও সবাইকে বন্দী করে। অটো ফ্রাঙ্ক ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৪৪ সালে শেষ বারের মতো তার স্ত্রী ও কন্যাদের দেখতে পান। এরপর বন্দী পুরুষ ও নারীদের আলাদা করে ফেলা হয়।

বেশ কয়েকটি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের পর, আনা ও তার বোন মার্গারিটকে বার্জেন – বেলসন ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। ইতোমধ্যে তাদের মা এডিথের মৃত্যু হয়েছে। জার্মানির আউশভিৎস বন্দীশিবিরে ১৯৪৫ সালের ৬ জানুয়ারি মারা যান আনার মা। সৈন্যদের নির্মম অত্যাচার ও অসুখে এই ক্যাম্পেই আনারা দু বোন মারা যায়। একই বছরের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে অথবা মার্চের শুরুতে মারা যান মারগেট। ওই মার্চেই শেষবারের মতো চোখ বুঁজেন আনা। তখন আনার বয়স ছিলো ১৫ ও মার্গারিটের ১৯। তাদের মৃত্যুর মাত্র এক সপ্তাহ পর ব্রিটিশ সৈন্যরা ক্যাম্পটি মুক্ত করে।

কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে বেঁচে যাওয়া অটো ফ্রাঙ্ক দেশে ফিরে তার স্ত্রী ও মেয়েদের মৃত্যুর কথা জানতে পারেন। আনার ডায়রিটি এ সময় তার কাছে আসে। মেয়ের স্মৃতিতে “আনা ফ্রাঙ্কের ডায়রি” ২৫ জুন ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে বইটি ৬৭ টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়।

ছবিতে এই ডাচ ভদ্রমহিলার নাম Miep Gies। তিনিই আনার ডায়রিটি সংরক্ষণ করেছিলেন এবং আনার বাবাকে দিয়েছিলেন।

আনার মূল ডায়রির সব কথা প্রকাশ করা হয়নি। কিছু কিছু কথা প্রাপ্ত বয়স্ক সুলভ হওয়ায় তা বাদ দেয়া হয়েছে। আনা অভিনয় শিল্পী হবার স্বপ্ন দেখতেন। তাকে নিয়ে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র ও নির্মাণ করা হয়। ইউটিউবে আনা ফ্রাঙ্ককে একটি ভিডিও চিত্রতে দেখা যায়। “Anne Frank: the only existing film images” নামের ভিডিওটি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ধারণ করা হয়েছিলো। আনার বোন মার্গারিটও ডায়রি লিখেছিলেন। তবে তার ডায়রেটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। সারা বিশ্বে আনা ফ্রাঙ্কের ডায়রি জনপ্রিয়তা পেলেও “ইহুদী প্রীতি’র” অভিযোগে হেযবুল্লাহ লেবাননে বইটি নিষিদ্ধ করে। কিন্তু দল মত নির্বিশেষে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, আনা ফ্রাঙ্ক আজও যেকোনো বিবেকবান মানুষের কাছে প্রাসঙ্গিক হয়ে আছে। আনার ডায়রিতে প্রকাশ পেয়েছে জীবনের প্রতি তার উচ্ছ্বাস ও ভালোবাসা। ধর্ম, রাষ্ট্র, ঈশ্বর, প্রেম ও জীবনের প্রতি তার সেই আকুলতা এখনো টিকে আছে। রয়েছে স্বাক্ষী হিসেবে দুই বছর দুই মাসের দিনলিপি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.