ছেলেটি
“বছরের শেষ প্রেম,সময়ের অনাবৃত উপহার।
হবে শীত বসন্তের রেষারেষি,
অনুমেয় চিত্ররেখা, প্রকৃতির আজব এক রীতি!
“একি! কাঁদছো কেন?”
আমার শিঁড়দাড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল।
আমি বললাম;
“বালক! আর তো হবে না দেখা!
মেঘে মেঘে ভাসবে শিমুল, শাপলা কথা কইবে,
বৃদ্ধ তাল গাছ নুয়ে পড়বে।
ফুটবে কদম, পিষ্ট হবে পথিকের পায়ে,
তোমার, কষ্ট হবে না?”
পরিচিত সেই ঠোঁট বাঁকলো!
“এইতো সামনে!
শামুকের খোলসে আম কেটে খাবে।
আমাকে দু-এক পিস দেবে।
টক কুল তোমার জিহ্ব ছুবে।
আঙ্গুলে মাখবে চালতার ঝিল্লি
হাতের তালুতে একটু মরিচ!”
সে কাঁদছে ছলছল,
“তুমি রইবে না এই গায়ে?
পুকুরে মাছেদের ভয় দেখাবে না?
দুষ্ট বিড়ালকে তাড়া করবে না?
অলস ভঙ্গিতে বসবে না সিঁড়িতে?
যেন কত কিছু বুঝো!
কেঁদে কেঁদে সবার ঘুম ভাঙ্গবে না?
স্কুলের জামা কাপড় ময়লা করবে না?
ভারী ব্যাগ কাধে নিয়ে হাটবে!!”
দিশাহীন মায়ের গলা ধরে এলো!!
“চুপ করে আছ কেন?কথা বলো!!
কোথায় যাবে তুমি?
কোথায় যাবে, আমাদের ছেড়ে!
তোমার শান্ত বোনের দিকে চেয়ে দেখ!
সারাদিন কিছু খায় নি!
একটু একটু সাহস নিয়ে তোমার দিকে চায়,সামনে চলে
আবার পিছয়ে যায়,যদি তুমি ব্যথা পাও!
কত মায়া তোমার!”
শেষদৃশ্যে;
ছেলেটি চোখ মেলে চাইলো
খুব সুন্দর করে হাসলো।
বুঝতে কারো বাকি রইলো না।
ভঙ্গুর কাঠের মত ভাঙ্গলো সবার হৃদয়,
এলো মৃত্যুর শীতলতা,
কিছুক্ষণ স্তব্ধ নীরবতা।
মায়ের ছিলো তবু আশা।
অচিরেই কাটবে কুয়াশা।
সুন্দরী এক নার্স এলো,
চোখদুটি মিষ্টি ছিলো।
কেউ একজন জায়গা করে দিলো।
শুধু শুধু প্রতীক্ষা বাড়লো।
গ্রাম থেকে মেললো ডানা গায়ক পাখির দল।
শুধু ছেলেটির বিলাপ।বললো,
চলে যেও না, আমরা এলাম গাইতে বসন্তের গান।
বাজলো কড়ই পাতার মর্মর,জয় বৃক্ষের উদারতা
“কোথায় সে?”
প্রশ্ন বৃক্ষবৃষ্টি এবং নি:স্বতার।
মহাকালের মায়জালে জড়ালো আরো একটি বছর,একটি প্রাণ।
আমি নখটিপে যাচ্ছিলাম ক্রমাগত।
কাদবো কেন?
“পুরনো কানে কানে বলে,অতীত ছায়া হয়ে চলে।
জীবন জীবন্ত রংপেন্সিলে আঁকা দেয়ালে।“
বসন্তের বাতাস বইছে।
চাইছিলাম স্বাভাবিক হতে,যেন কিছুই ঘটেনি।
নাট্যমঞ্চ বড্ড একপেশে।
গোটা শহরের আনন্দ,সুরহীন বাজে!
তবুও থেমে থাকে না কিছুই!!
ফুতফাতের স্তন্যপায়ী শিশুরা মাথা তুলে চাইলো।বললো,
“বেঁচে আছি এখনো।
কিনে দাও এক ক্যালেন্ডার জীবন”
আসবে নতুন বছর!
শুভেচ্ছা জানাতে হবে না?
স্বাগত নতুন সবকিছু!
এবং ঈশ্বর।